College girl running a school with tuition money

টিউশনির টাকা দিয়ে স্কুল চালাচ্ছেন কলেজছাত্রী

 

দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন হবিগঞ্জ শহরের কলেজছাত্রী শিরিন আক্তার সোনিয়া। ছোট্ট একটি টিনের ঘর বানিয়ে শহরের মাহমুদাবাদ এলাকায় তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন মায়ের মমতা নামে অবৈতনিক বিদ্যালয়। 

 

সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের জন্য বেঞ্চ ও পাঠাগারের জন্য কিনেছেন অনেক বই। আর এসবই করেছেন টিউশনির মাধ্যমে উপার্জিত নিজের টাকা দিয়ে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, শহরের মাহমুদাবাদ এলাকার বাসিন্দা নুরুল হকের মেয়ে শিরিন আক্তার সোনিয়া। সিলেট এমসি কলেজে মাস্টার্সে পড়ছেন। সমাজের জন্য কিছু করার তাগিদ, আর ঝরে পড়াদের শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করতে ২০১৭ সালের শেষে দিকে প্রতিষ্ঠা করেন অবৈতনিক এই বিদ্যালয়। নাম দেন মায়ের মমতা অবৈতনিক বিদ্যালয়। এখানে দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েদের বিনামূলে পাঠদান করা হয়। পাশাপাশি বয়স্কদের স্বাক্ষরজ্ঞানও শেখানো হয়।

 

শিরিন আক্তার প্রথমে ৩০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে এর সংখ্যা ১২০ জনে দাঁড়িয়েছে। এখানে শুধু পাঠদানই নয়, গান, বাজনা শেখানোসহ দেয়া হয় নৈতিক শিক্ষাও।

এছাড়া বিদ্যালয়েই গড়ে তুলেছেন মায়ের নামে একটি পাঠাগার। হরেক রকম বই দিয়ে সাজানো সেই পাঠাগারে অবসর সময়ে বই পড়তে আসেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ। বোনের ১ শতাংশ জমিতে টিন দিয়ে নির্মিত ঘরে গড়ে তুলেছেন এ বিদ্যালয়। প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে শিক্ষার বাতি জ্বালাচ্ছেন ঘরে ঘরে।

অভিভাবকরা জানান, শুরুতে তারা মনে করেছিলেন এখানে পড়াতে হয়তো প্রচুর খরচ দিতে হবে। কিন্তু বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা শিরিন আক্তার ঘরে ঘরে এসে শিক্ষার্থী জোগাড় করেছেন। অভিভাবকদের বুঝিয়েছেন এখানে গরিব শিক্ষার্থীদের বিনা খরচে পড়ানো হয়।

তারা আরও জানান, শিরিন আক্তার নিজে বাড়ি বাড়ি ঘুরে টিউশনি করে যা পান তা দিয়েই এ বিদ্যালয়ের খরচ চালান। কারও কাছ থেকে এক টাকা সাহায্যও নেন না।

তারা বলেন, এ বিদ্যালয়ে পড়ে দ্ররিদ্র শিক্ষার্থীরা এখন সামাজিক হয়েছে। মুরুব্বিদের দেখলে তারা সালাম দেয়, আদবের সঙ্গে কথা বলে। এখানে পড়াশোনার পাশাপাশি তারা গান, নাটকসহ নৈতিকতাও শিখছে।

শিরিন আক্তার সোনিয়া জানান, কষ্ট হলেও নিজের টিউশনি থেকে পাওয়া টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ের খরচ যোগান। বর্তমানে বিদ্যালয়ে তিনিসহ ৩ জন শিক্ষক রয়েছেন। এর মাঝে একজনকে তিনি সামান্য সম্মানি দেন, অন্যজন বিনামূল্যেই পড়াচ্ছেন।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত স্কুলে শিক্ষার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করে এ জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন এই আলোর দিশারী।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top