করোনা পরিস্থিতির রেশ কাটতে না কাটতেই একঝাঁক সমস্যা বাংলাদেশকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরছে। করোনার কারণে লক ডাউন, লক ডাউনের কারণে অর্থনৈতিক, শিক্ষা সঙ্কটসহ নানামূখী সঙ্কটের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এক গভীর অন্ধকার টানেলে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশের জন্য তাই আগামী তিনটি মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মে, জুন, জুলাই- এই ৩ মাসে বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য, আর্থসামাজিক এবং অর্থনীতিতে এক গভীর সঙ্কটময় পরস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। কি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে এই ৩ মাসে? আসুন আমরা একটু বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করি-
১. করোনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা
বাংলাদেশে করোনা ব্যাপকভাবে সামাজিক সংক্রমণ হয়েছে এবং সামাজিক সংক্রমণের সময় যে বিধিনিষেধগুলো মানা উচিত ছিল, সেই বিধিনিষেধগুলো আমরা তোয়াক্কা করিনি। তথাকথিত ছুটি উপেক্ষা করে রাস্তায় মানুষ বের হচ্ছে, গার্মেন্টসগুলো খুলে দেয়া হয়েছে, হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলো খুলে দেয়া হয়েছে, মানুষের ঢল এখন এখন ঢাকায় ফেরা শুরু করেছে। এই লক ডাউন কার্যত অর্থহীন হয়ে পড়েছে। এর ফলে দেখা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশের এখন করোনা পরিস্থিতি ব্যাপকভাবে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তথাকথিত অর্থনীতি বাঁচানোর কথা বললেও আসলে কিছু ব্যক্তি মুনাফা লোভের কারণে গার্মেন্টসসহ শিল্প কারখানাগুলো খুলে সামাজিক সংক্রমণের এক পটভূমি তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে। কাজেই সামনের ৩ মাসে করোনার সংক্রমণ যদি ব্যাপক হয় বাংলাদেশে, তাহলে অবাক হবার কিছু নেই।
২. বেকারত্ব, দারিদ্রতা, তীব্র অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে ক্ষোভ-বিক্ষোভ
ইতিমধ্যেই করোনা সঙ্কটের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে। রাস্তায় বুভুক্ষু ক্ষুধার্ত মানুষ দুবেলা খাবারের জন্য এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছে। ইতিমধ্যে দু-একটি স্থানে ত্রাণের ট্রাক লুট করে নিয়ে গেছে সাধারণ মানুষ। আগামী তিন মাস এই খাদ্য ঘাটতি, বেকারত্ব এবং দরিদ্র মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে যদি তাঁদের মাঝে খাদ্য সরবরাহ সঠিকভাবে এবং নিরবিচ্ছিন্নভাবে সরবারহ না করা যায়, তাহলে তাঁদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়বে। এটা বাংলাদেশে একটি বড় ধরণের অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারে।
৩. ঢাকায় ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু
করোনার দিকে নজর দিতে গিয়ে আমরা ডেঙ্গুকে উপেক্ষা করছি। ইতিমধ্যে বারবার সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে যে, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ শহরাঞ্চলগুলোতে এবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু উপেক্ষিত একটি বিষয়। দুয়েকটি সাধারণ বিজ্ঞপ্তি এবং নিজেদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ে দৃশ্যত কিছুই করা হয়নি এবং আগামী ৩ মাসে বাংলাদেশে করোনার সাথে পাল্লা দিয়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর রুপ নিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কাজেই এই ৩ মাসে ডেঙ্গুও একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা।
৪. চাকরি ছাঁটাই, গণঅসন্তোষ
ইতিমধ্যে করোনা সঙ্কট শুরু হবার সাথে সাথেই চাকরি ছাঁটাই শুরু হয়েছে, মানুষের অর্থনৈতিক জীবনমান নেমে গেছে, ক্ষুদ্র-মাঝারি আয়ের মানুষদের আয়-উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে, ছোট ছোট উদ্যোক্তারা পথে বসেছে- এরকম পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ দানা বেঁধে উঠবে, ক্ষুদ্ধ্ব মানুষ রুটি-রুজির জন্য রাজপথে নেমে আসতে পারে এবং তাঁদেরকে যথাযথভাবে পূনর্বাসন এবং শিল্প কারখানাগুলোকে পুনরুজ্জীবনের ব্যবস্থা না করলে এই নিম্ন এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষগুলোর ক্ষোভ বিক্ষোভের আগুন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়তে পারে।
৫. ধ্বংসের মুখে শিক্ষা ব্যবস্থা
করোনাকালে আমাদের ধ্বংসের মুখে পড়তে যাচ্ছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী গতকাল জানিয়ে দিয়েছেন যে, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে এবং এতদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে আমাদের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত কি হবে, মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যত কি বা উচ্চ শিক্ষারই বা ভবিষ্যত কি- এমন নানা প্রশ্ন। এই সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা বেশ কঠিন হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে অর্থনৈতিক সঙ্কট চাইলে কাটিয়ে ওঠা যায়। কিন্তু শিক্ষার যে ক্ষতি হবে, সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়াটা বাংলাদেশের জন্য সত্যিই কঠিন হবে।
এরকম পরিস্থিতিতে আগামী ৩ মাস পার করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ এবং এই পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দেয়া হবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।